ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

গরমে সুস্থ থাকার উপায়

আপডেট : ২২ জুলাই ২০২৫, ১১:২১ এএম

সারা দেশে পড়েছে প্রচন্ড গরম! ঘরে-বাইরে নেই কোথাও স্বস্তি। খেতে ভালো লাগছে না, রোদে বের হলেই মাথা ধরে যাচ্ছে। রাতে ঘুম হচ্ছে না। ঘাম ঝরছে অনবরত তার সঙ্গে তৃষ্ণায় ছাতি ফেটে যাচ্ছে। মূলত গরমের সময় তাপমাত্রা ও আদ্রতা বেড়ে যাওয়ায় শরীরে রক্তসঞ্চালন ক্রিয়া, কিডনিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর ওপর প্রভাব পড়ে। ফলে শরীরে দেখা দেয় বিভিন্ন অসুখ বিসুখ। সাধারণত ঘামের মাধ্যমে দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়। 

কিন্তু তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার তারতম্য ঘটলে এই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় সমস্যার সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত ঘাম শরীরে শুকিয়ে গেলে, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও ধুলাবালির মধ্যে বেশিক্ষণ থাকলে ত্বকে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমন অবস্থায় কীভাবে নিজেকে সুস্থ রাখবেন চলুন জেনে নেওয়া যাক।

* বেশি করে পানি পান করতে হবে। পানির সঙ্গে অন্যান্য পানীয়, যেমন ডাবের পানি, ফলের জুস খাওয়ার মাধ্যমেও উপকার পাওয়া যেতে পারে। তবে প্যাকেটজাত জুস না খেয়ে তাজা ফলের রস খাওয়াই ভালো।

* প্রতিদিন সাবান দিয়ে গোসল করতে হবে। এতে ত্বকের ওপর জমে থাকা ময়লা ও রোগ জীবাণু দূর হবে। ঘামাচির জন্য শরীরে নন-মেডিকেটেড ট্যালকম পাউডার করা যেতে পারে। সামার বয়েলের ওপর বরফ ঘষলে উপকার পাওয়া যাবে। 
* রোদে বাইরে বের হওয়ার আগে সম্ভব হলে শরীরের অনাবৃত অংশে সানস্ক্রিন লোশন মাখিয়ে নেওয়া উচিত।

* গ্রীষ্মকালে তৃষ্ণা নিবারণের জন্য মানুষ রাস্তার পাশে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রস্তুত আখের রস, তরমুজের জুস, আইসক্রিম, শরবত ইত্যাদি কিনে খায়। এর ফলে বিভিন্ন ধরণের অসুখ বিসুখ দেখা দেয়। গরমকালে অসুখ বিসুখের মধ্যে ডায়রিয়া, টাইফয়েড জ্বর, হেপাটাইটিস বি, লিভারের ইনফেকশন বা জন্ডিস, পেটের প্রদাহ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এসব অসুখ থেকে নিরাপদ থাকতে হলে অনিরাপদ উৎস থেকে পানি সংগ্রহ ও পান থেকে সাবধান থাকতে হবে।

* দোকানে চা খাওয়ার ক্ষেত্রেও সাবধানে থাকতে হয়। কারণ যে পানিতে চা তৈরি হয়, তা বিশুদ্ধ নাও হতে পারে। অনেকে মনে করেন যে পানি গরম করলেই রোগজীবাণু মরে যায়। কিন্তু পানি ফুটতে শুরু করার পর অন্তত ৩০ মিনিট আগুনে না রাখলে বেশির ভাগ জীবাণু মরে না। 
* শরীরে পানি ও খনিজ লবণের অভাব পূরণের জন্য প্রয়োজনে ওরস্যালাইন ও গ্লকোজ খেতে হবে। পেটের প্রদাহ এড়াতে বাসি, তেলে ভাজা-পোড়া খাবার এবং হোটেলে খাওয়া বাদ দিতে হবে।

* গরমকালে এডিস ও অ্যানোফিলিস মশা অসুখ ছড়ায়। এর ফলে হতে পারে ডেঙ্গু জ্বর ও ম্যালেরিয়ার মত রোগ। মশা প্রতিরোধ করতে হলে বাড়ির আশপাশের ডোবা-নালা, ড্রেন পরিষ্কার রাখতে হবে। মশারি, মশার কয়েল ও ইনসেক্ট স্প্রে ব্যবহার করতে হবে।    
* গরমে ভাইরাল ফিভার বা ভাইরাস জ্বর, হাম ইত্যাদি অসুখ দেখা দেয়। ভাইরাল ফিভারে সাধারণত শরীরের মাংশপেশিতে ব্যথা হয়, সর্দিও থাকে। এমন লক্ষণ দেখা দিলে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার দরকার ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত হলে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। যেকোনো জ্বরেই শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। এছাড়া জ্বর কমাতে গা স্পঞ্জ করতে পারেন। হামে আক্রান্তদের অন্তত এক সপ্তাহ পূর্ণ বিশ্রামে থাকা উচিত।

* গরমে প্রচুর ঘামার ফলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। ফলে শরীরে রক্তশূন্যতা, দুর্বলতা, মাংসপেশিতে ব্যথা, অবসন্নতা, পেট ব্যথা, মাথা ঘোরানো ইত্যাদি রোগ দেখা দিতে পারে। এজন্য বেশি তাপমাত্রায় বা রোদে দীর্ঘ সময় কাজ করার বিষয়ে সাবধান হতে হবে।

* গরমে দেখা দিতে পারে হিট স্ট্রোক। হঠাৎ করে শরীরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হলে শরীর আকস্মিকভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এ সময় ত্বক শুকিয়ে যায়, পালস বেড়ে যায়, তীব্র মাথাব্যথা হয়, বমি বমি ভাব হয়। অনেক সময় রোগী অজ্ঞানও হয়ে যায়। এ রোগে আক্রান্ত হলে রোগীকে ছায়াযুক্ত স্থানে বাতাস করতে হবে। মাথায় পানি ঢেলে বা শরীর ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে দিতে হবে। তবে হিটস্ট্রোক আক্রান্ত রোগীকে তাৎক্ষণিকভাবে মুখে পানি বা অন্য কোনো খাবার দেওয়া যাবে না।

* গরমকালে সাধারণত ছোটরাই বেশি আক্রান্ত হয়। তাই গরমের সময় তাদের প্রতি বাড়তি নজর রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চার চোখ ভেতরে ঢুকে গেছে কি না, বাচ্চা কম প্রস্রাব করছে কি না, বা পাতলা পায়খানা বেশি হচ্ছে কি না। এর যেকোনো একটি লক্ষণ দেখা গেলেই দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।

KK
আরও পড়ুন