ঢাকা
শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

প্রচুর পানি পানেও তৃষ্ণা মেটে না, যে রোগের লক্ষণ

আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:১৬ এএম

পেট পানিতে টইটম্বুর, আর এক ফোঁটা পানি খাওয়ারও জায়গা নেই, অথচ গলা শুকিয়ে কাঠ! শুনতে অদ্ভুত লাগলেও অনেকের সঙ্গেই এমনটি ঘটে। সম্প্রতি এক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ‘কোরা’ (Quora) ফোরামে নিজের এই অসহনীয় অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছিলেন। তার সমস্যা ছিল- প্রচুর পানি পানের পরেও তৃষ্ণা না মেটা।

বিষয়টি নিয়ে অ্যাস্টার হোয়াইটফিল্ডের লিড কনসালট্যান্ট (এন্ডোক্রিনোলজি ও ডায়াবেটোলজি) ডা. নরেন্দ্র বিএস জানান, ‘অবিরত তৃষ্ণা পাওয়া মোটেও সাধারণ কোনো বিষয় নয়, এর পেছনে থাকতে পারে গুরুতর শারীরিক সমস্যা।’

ডা. নরেন্দ্রর মতে, এই লক্ষণের পেছনে প্রধানত তিনটি কারণ থাকতে পারে

১. রক্তে উচ্চ শর্করা বা ডায়াবেটিস: রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে গেলে শরীর প্রস্রাবের মাধ্যমে চিনি বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে। এই প্রক্রিয়ায় শরীর থেকে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায়, ফলে রোগী বারবার তৃষ্ণার্ত বোধ করেন।
২. ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস (Diabetes Insipidus): এটি একটি হরমোনজনিত সমস্যা। এতে কিডনি প্রস্রাবের ঘনত্ব বজায় রাখতে পারে না, ফলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পাতলা প্রস্রাব বেরিয়ে যায় এবং তীব্র পিপাসা পায়।
৩. সাইকোজেনিক পলিডিপসিয়া: এটি মূলত মানসিক বা মস্তিষ্কের তৃষ্ণা কেন্দ্রের (Thirst Centre) সমস্যা, যেখানে শরীরে পানির প্রয়োজন না থাকলেও ব্যক্তি অতিরিক্ত পানি পান করতে থাকেন।

এছাড়াও কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ (যেমন: লিথিয়াম, ডাই-ইউরেটিকস), শরীরে ক্যালসিয়াম বেড়ে যাওয়া বা মুখ শুকিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যার কারণেও এমনটি হতে পারে।

তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি অতিরিক্ত তৃষ্ণার সঙ্গে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দেয়, তবে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত-

  • অস্বাভাবিকভাবে ঘন ঘন এবং প্রচুর পরিমাণে প্রস্রাব হওয়া।
  • হঠাৎ করে কোনো কারণ ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া।
  • চরম ক্লান্তি বা শরীর দুর্বল লাগা।
  • চোখে ঝাপসা দেখা।
  • বমি বমি ভাব, শ্বাসকষ্ট বা জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থা।
  • মুখ অতিরিক্ত শুকিয়ে যাওয়া।

বিশেষজ্ঞের মতে, ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে পেটে ব্যথা, শ্বাস-প্রশ্বাসে ফলের মতো গন্ধ বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ‘ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস’-এর লক্ষণ হতে পারে, যা একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি। অন্যদিকে, ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস-এর ক্ষেত্রে শরীরে লবণের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে খিঁচুনি পর্যন্ত হতে পারে।

সঠিক কারণ খুঁজে বের করতে চিকিৎসকরা সাধারণত ধাপে ধাপে আগান। ডা. নরেন্দ্রর পরামর্শ অনুযায়ী প্রাথমিক পরীক্ষাগুলো হলো:

ব্লাড সুগার টেস্ট: প্রথমেই আঙুল ফুটো করে গ্লুকোজ বা HbA1c পরীক্ষার মাধ্যমে ডায়াবেটিস আছে কি না তা নিশ্চিত হতে হবে।

মেটাবলিক প্যানেল: শরীরে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং কিডনির অবস্থা (ক্রিয়েটিনিন) যাচাই করা।

প্রস্রাব পরীক্ষা: প্রস্রাবের ঘনত্ব এবং গ্লুকোজের উপস্থিতি দেখা। প্রস্রাব খুব পাতলা হলে তা ডায়াবেটিস ইনসিপিডাসের ইঙ্গিত দেয়।

অন্যান্য: প্রয়োজনে থাইরয়েড পরীক্ষা বা মস্তিষ্কের (পিটুইটারি গ্ল্যান্ড) এমআরআই করা হতে পারে।

তাই তেষ্টা পেলেই কেবল পানি খেয়ে স্বস্তি খুঁজবেন না; যদি তা অস্বাভাবিক মনে হয়, তবে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। রক্ত ও প্রস্রাবের সাধারণ কিছু পরীক্ষাই আপনাকে বড় বিপদ থেকে বাঁচাতে পারে।

DR/AHA
আরও পড়ুন