আমরা প্রতিদিনই দেখি বন্ধু, সহকর্মী, কিংবা আশপাশের মানুষজনের বেশিভাগই বাঁহাতে ঘড়ি পরেন। দোকানে ঘড়ি কিনতে গেলেও সেলসম্যান স্বাভাবিকভাবে বাঁহাতে পরে দেখান। এমনকি ঘড়ির বিজ্ঞাপনেও মডেলদের বাঁহাতে ঘড়ি দেখা যায়। কিন্তু কেন? এটি কি কেবলই অভ্যাস, নাকি ফ্যাশন? নাকি এর পেছনে আরও গভীর কোনো বাস্তব কারণ লুকিয়ে আছে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি শুধু রুচি বা স্টাইল নয়, এর পেছনে রয়েছে মানুষের দৈনন্দিন কাজের সুবিধা, ঘড়ির সুরক্ষা, এমনকি পুরোনো ঘড়ির যুগ থেকে আসা ঐতিহাসিক কারণও। আশ্চর্যের বিষয় হলো, আপনি ডানহাতি না হলেও এই অভ্যাসের যুক্তিগুলো খুবই বাস্তব এবং যৌক্তিক।
চলুন, একে একে জেনে নেওয়া যাক কেন বেশিভাগ মানুষ বাঁহাতে ঘড়ি পরেন।
কাজের সুবিধা সবচেয়ে বড় কারণ
অধিকাংশ মানুষ কেন বাঁহাতে ঘড়ি পরেন, কারণ জানলে অবাক হবেন
ভুলেও খাবেন না এই ৩ পানীয়, নষ্ট হতে পারে আপনার স্মৃতিশক্তি
বিশ্বের প্রায় ৯০% মানুষ ডানহাতি। তারা দৈনন্দিন প্রায় সব কাজই ডানহাতে করেন—লেখেন, টাইপ করেন, মোবাইল চালান, দরজার নক ধরেন, জিনিস তোলেন।
নিরবচ্ছিন্ন কাজ : লেখার সময়, কম্পিউটার ব্যবহারের সময়, জিনিসপত্র ধরার সময় বা অন্যান্য সূক্ষ্ম কাজ করার সময় ডানহাতই ব্যস্ত থাকে। ঘড়ি বাঁহাতে থাকলে, ডানহাতের কাজ বন্ধ না করেই মুহূর্তের মধ্যে বাঁহাতে সময় দেখা সম্ভব হয়।
স্বাচ্ছন্দ্য : যদি ডানহাতে ঘড়ি পরা হয়, তবে লেখার সময় ঘড়ির ডায়াল টেবিলের ওপর ঘষা খেতে পারে এবং অস্বস্তি তৈরি করতে পারে। বাঁহাতে ঘড়ি থাকলে কাজের সময় তা কম বাধা সৃষ্টি করে।
সুরক্ষা ও স্থায়িত্ব
ঘড়ি একটি মূল্যবান এবং সংবেদনশীল জিনিস। এটিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্যই নন-ডমিন্যান্ট হাতে পরা হয়।
আঘাত এড়ানো : যেহেতু ডানহাত সব কাজ করে, তাই এটিকে ঘন ঘন দরজা, টেবিল বা অন্য বস্তুর সঙ্গে ধাক্কা লাগার ঝুঁকি থাকে। বাঁহাতে ঘড়ি থাকলে ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা কমে যায় এবং ঘড়ির ডায়াল ও স্ট্র্যাপ সুরক্ষিত থাকে।
দীর্ঘায়ু : কম আঘাত পাওয়ার কারণে ঘড়িটি দীর্ঘস্থায়ী হয়।
ঐতিহাসিক কারণ
আধুনিক স্মার্টওয়াচ কিংবা কোয়ার্টজ ঘড়িতে দম দেওয়ার ঝামেলা নেই। কিন্তু অতীতে বেশিভাগ ঘড়িই ছিল ম্যানুয়াল ওয়াইন্ডিং, যাদের নিয়মিত দম দিতে হতো।
সহজ অপারেশন : ঘড়ির ‘ক্রাউন’ বা দম দেওয়ার কাঁটাটি সাধারণত ডানদিকে থাকে। বাঁহাতে ঘড়ি পরলে ডানহাত দিয়ে সহজে দম দেওয়া যেত। ডানহাতিরা তাই স্বাভাবিকভাবে বাঁহাতকেই বেছে নিয়েছেন, আর এই অভ্যাস এখনো চলছে।
বাঁহাতিদের ব্যাতিক্রম
বামহাতিদের ক্ষেত্রে এই নিয়মটি উল্টো। যেহেতু তাদের বাঁহাত কাজকর্মে বেশি ব্যবহৃত হয়, তাই বামহাতিরা সাধারণত তাদের ঘড়ি ডানহাতে পরেন। এর কারণও সেই একই, বাঁহাতকে কাজের জন্য মুক্ত রাখা এবং ডানহাতে পরা ঘড়িটিকে সুরক্ষিত রাখা।
সারসংক্ষেপ
ঘড়ি বাঁহাতে পরা শুধুই অভ্যাস নয়, এটি একটি যৌক্তিক ও প্রাকৃতিক সিদ্ধান্ত। কাজের সুবিধা, ঘড়ি রক্ষা, ঐতিহাসিক প্রভাব—সব মিলিয়ে এটি আজকের দিনে একটি বিশ্বব্যাপী স্বাভাবিক স্ট্যান্ডার্ডে পরিণত হয়েছে। সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস
