মহানবী (সা.) শুধু মানুষদের জন্যই প্রেরিত হননি, বরং মানুষ জিন এই দুই জাতির জন্যই সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। আল্লাহ বলেন :আমি জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুধুমাত্র আমার ইবাদতের জন্য।( সুরা আয-যারিয়াত, আয়াত : ৫৬)।
তাই মহানবী (সা.) জিনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন, তাদের শিক্ষা দিতেন। তাদের প্রতিনিধি দলগুলো বিভিন্ন প্রশ্ন, সমস্যা বা কোরআন শ্রবণের উদ্দেশ্যে তার কাছে আসত।
আল্লাহ বলেন :(হে নবী!) আর স্মরণ কর, যখন আমি জিনদের একটি দলকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। তারা কোরআন পাঠ শুনছিল। যখন তারা তার কাছে উপস্থিত হল, তখন তারা বলল, ‘চুপ করে শোন। তারপর যখন পাঠ শেষ হল তখন তারা তাদের কওমের কাছে সতর্ককারী হিসেবে ফিরে গেল। (সুরা আহকাফ, আয়াত : ২৯)।
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, বল, ‘আমার প্রতি ওহী করা হয়েছে যে, নিশ্চয় জিনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে শুনেছে। অতঃপর বলেছে, ‘আমরা তো এক বিস্ময়কর কোরআন শুনেছি।(সুরা জিন, আয়াত : ০১)।
এই আয়াতগুলো প্রমাণ করে যে, মহানবী (সা.) মক্কা, মদিনা এবং বিভিন্ন সফরে বহুবার জিনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এসব সাক্ষাৎকারে উপস্থিত ছিলেন বিলাল ইবনু রাবাহ, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ, যুবাইর ইবনু আওয়াম (রা.) প্রমুখ সাহাবীগণ।
জিনদের মধ্যে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিল এবং নিয়মিত মহানবীর (সা.) কাছে আসত—তাদের মধ্যে ছিল নসীবিনের জিনরা। তাদের সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন :
আমার কাছে নসীবিনের জিনদের প্রতিনিধি দল এসেছিল। তারা খুব উত্তম জিন। তারা আমার কাছে খাদ্য চেয়েছিল, আর আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলাম যেন তাদের কাছে অস্থি ও বিষ্ঠা খাদ্যরূপে উপস্থাপিত হয়। (বুখারি)।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতে, সাহাবির সংজ্ঞা হলো— যে ব্যক্তি মহানবীর (সা.) সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে, তার প্রতি ঈমান এনেছে এবং ঈমানের উপরই মৃত্যুবরণ করেছে।
তাই জিনদের মধ্য থেকে যেসব জিন নবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে, ঈমান এনেছে এবং ঈমানসহ মৃত্যুবরণ করেছে নিঃসন্দেহে তারাও সাহাবি।
ইবনু হাযম (রহ.) বলেন, এ বিষয়ে দুই মুসলমানের মধ্যে কোনো মতভেদ নেই যে, জিনদের একদল মহানবীর (সা.) সাহচর্য লাভ করেছে এবং ঈমান এনেছে। যে ব্যক্তি এ কথা অস্বীকার করবে, সে কোরআন অস্বীকার করার কারণে কাফের হবে। ওই সব জিনদের সেই সম্মান, মর্যাদা ও প্রাধান্য রয়েছে যা অন্য সাহাবিদের রয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
তিনি আরও বলেন, এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, জিনদের একটি প্রতিনিধি দল নবীজির কাছে এসেছিল, ইসলাম গ্রহণ করেছিল, বায়আত করেছিল এবং নবীজি তাদের কোরআন শিক্ষা দিয়েছিলেন। সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, তাদের মধ্যে সৎ, নেককার ও হিদায়াতপ্রাপ্ত সাহাবিরাও রয়েছে। যে কেউ এটি অস্বীকার করবে সে কাফের হবে।
ইবনু হজর (রহ.) বলেন, জিনরাও সাহাবির অন্তর্ভুক্ত। কারণ, নবীজি অবশ্যই তাদের উদ্দেশে প্রেরিত হয়েছেন, তারা দায়িত্বপ্রাপ্ত, তাদের মধ্যে বাধ্য ও অবাধ্য উভয়ই আছে। যাদের নাম নির্দিষ্টভাবে জানা গেছে, তাদের সাহাবি তালিকায় উল্লেখ করতে কোনো দ্বিধা নেই।
তিনি তার বিখ্যাত গ্রন্থ আল-ইসাবা ফি তামইযিস সাহাবা-তে কিছু জিন সাহাবির নামও উল্লেখ করেছেন। যেমন : আহকাব, আরকাম, জৌবাআ, হাসির ইত্যাদি।
সালাফদের গ্রন্থে এসব জিনদের সম্পর্কিত কিছু ঘটনা উল্লেখ আছে। যেমন:
১. সিউতীর আল-খাসায়িস আল-কুবরা থেকে, উবাই ইবনু কাব (রা.) থেকে বর্ণিত হজে যাওয়ার পথে কিছু লোক পথ হারিয়ে মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে যায়। হঠাৎ এক জিন এসে বলে : আমি সেই জিনদলের বাকি সদস্যদের একজন, যারা নবীর কাছ থেকে কোরআন শুনেছিল। নবী বলেছেন : মুমিন মুমিনের ভাই; সে তার চোখ ও পথপ্রদর্শক হয়, তাকে একা ফেলে রাখে না। তারপর তিনি তাদের পানি ও সঠিক পথ দেখিয়ে দেন।
২. শিবলীর আকামুল মারজান থেকে, ওমর ইবনু আবদুল আজিজ (রহ.) এক সময় মরুভূমিতে একটি মৃত সাপ দেখে কাপড়ে জড়িয়ে দাফন করেন। তখন এক আওয়াজ আসে—
হে সারাক, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নবী তোমাকে বলেছিলেন, একদিন মরুভূমিতে তুমি মারা যাবে, এক সৎ ব্যক্তি তোমাকে দাফন করবে। আমি সেই জিনদলের একজন, যারা নবীর কাছ থেকে কোরআন শুনেছিল। তাদের মধ্যে আমি আর সারাক ছাড়া কেউ বাকি নেই; আর সারাক আজ মারা গেছে।
৩. আসবাহানীর আল-আযামা থেকে, এক ব্যক্তি উসমান (রা.)-কে জানালেন যে, মরুভূমিতে দুটি সাপের সংঘর্ষ করতে দেখেন এবং তাদের একজনের দেহ থেকে মস্কের ঘ্রাণ পান। তিনি সেটিকে দাফন করেন। পরে শুনতে পান : তুমি সঠিক কাজ করেছ। এই দুইটি সাপ ছিল দুটি জিন জাতি। যাকে তুমি দাফন করেছ সে শহীদ হয়েছে; সে ছিল সেই জিনদের একজন, যারা নবীর কাছে ওহি শুনেছিল।
উপরের ঘটনাগুলো সত্য হোক বা না হোক—আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মাঝে কোনো মতবিরোধ নেই যে, জিনরা অনেকবার নবীজির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে, এবং যারা তার কাছে এসে ঈমান এনেছিল তারা নিঃসন্দেহে তার সাহাবি হিসেবে বিবেচিত। তাদের প্রতি আমাদের সম্মান, মর্যাদা, এবং ধর্মীয় মূল্যায়ন অন্যান্য সাহাবিদেরই মতো। সূত্র : ইসলাম ওয়েব ডট নেট
পুরুষের জন্য মূল্যবান রত্ন বা পাথর ব্যবহারের বিধান