ডিজিটাল যুগে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার দাবি যত বাড়ছে, ততই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ। এর মধ্যে টেলিগ্রামের ‘সিক্রেট চ্যাট’ ফিচারটি সবচেয়ে শক্তিশালী এবং একই সঙ্গে বিতর্কিত। কারণ, এটি যেমন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় কার্যকর, তেমনি অপরাধী চক্রও অনেক সময় এই এনক্রিপ্টেড চ্যাটকে কাজে লাগায়। ফলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা সংস্থাগুলোর জন্য এই ফিচার একাধারে সুবিধা আবার চ্যালেঞ্জ।
সিক্রেট চ্যাট কীভাবে ভিন্ন?
টেলিগ্রামের সাধারণ চ্যাট ক্লাউডে সেভ থাকে এবং বহু ডিভাইস থেকে অ্যাক্সেস করা যায়। কিন্তু সিক্রেট চ্যাট পুরোপুরি আলাদা কাঠামোয় তৈরি। এটির বৈশিষ্ট্যগুলো হলো-
- এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন: প্রেরক ও প্রাপকের বাইরে কেউ বার্তা পড়তে পারে না, এমনকি টেলিগ্রামও নয়।
- ডিভাইস-টু-ডিভাইস চ্যাট: চ্যাট ডেটা ক্লাউডে সেভ হয় না, থাকে কেবল ডিভাইসেই।
- সেল্ফ-ডিলিট টাইমার: নির্দিষ্ট সময় পর বার্তা নিজে থেকেই মুছে যায়।
- স্ক্রিনশট অ্যালার্ট: স্ক্রিনশট নিলে অপর পক্ষ নোটিফিকেশন পায় (সীমিত ডিভাইসে)।
- ফরওয়ার্ড প্রতিরোধ: সিক্রেট চ্যাটের বার্তা ফরওয়ার্ড করা যায় না।
ফলে এই চ্যাটগুলো প্রায় অদৃশ্য, অত্যন্ত সুরক্ষিত এবং ব্যক্তিগত।
কেন অপরাধীরা ব্যবহার করে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বার্তা ট্র্যাক করা কঠিন হওয়ায় অপরাধীচক্র এনক্রিপ্টেড চ্যাটে বেশি ঝুঁকছে। কারণ-
- বার্তার কপি কোথাও থাকে না
- ডিভাইস পাল্টালে পুরোনো চ্যাট মুছে যায়
- সেল্ফ-ডিলিট ফিচারে আলাপ দ্রুত অদৃশ্য
- মেটাডেটা খুবই সীমিত
সন্ত্রাসী সংগঠন, আর্থিক জালিয়াত, ডার্ক-ওয়েব গ্রুপসহ অনেক অপরাধ নেটওয়ার্ক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই কারণেই সিক্রেট চ্যাট ব্যবহার করে থাকে।
তদন্তকারীদের চ্যালেঞ্জ
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান বাধা চ্যাটের ভেতরের তথ্য পাওয়া যায় না। এর বাইরে-
- ক্লাউডে ব্যাকআপ নেই
- অন্য ডিভাইস লিংক করা যায় না
- স্ক্রিনশট বা ফরওয়ার্ড করা যায় না
- চ্যাট লগ না থাকায় টাইমলাইন পুনর্নির্মাণ কঠিন
তাই তদন্তকারীরা সরাসরি বার্তার বদলে মেটাডেটা, লোকেশন, ডিভাইস আইডি, নেটওয়ার্ক প্যাটার্ন বিশ্লেষণ দিয়ে সূত্র খোঁজেন।
ট্র্যাক করা কি একেবারেই অসম্ভব?
বার্তার ভেতরের অংশ না দেখা গেলেও সন্দেহজনক কার্যকলাপ চিহ্নিত করা যায়। যেমন—
- হঠাৎ বহু অচেনা নম্বরের সঙ্গে যোগাযোগ
- অস্বাভাবিক সময়ের লগইন
- VPN বা ভার্চুয়াল নম্বর ব্যবহার
- ঘন ঘন ডিভাইস পরিবর্তন
- সিক্রেট চ্যাটে অস্বাভাবিক ট্রাফিক
- AI অ্যালগরিদম এসব প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করতে পারে।
- সাধারণ ব্যবহারকারীর জন্য কতটা নিরাপদ?
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণ ব্যবহারকারীর জন্য সিক্রেট চ্যাট নিরাপদ। ব্যক্তিগত ছবি, আর্থিক তথ্য, ব্যবসায়িক ডেটা ইত্যাদি সুরক্ষার ক্ষেত্রে এটি কার্যকর। তবে সতর্ক থাকতে হবে-
- অপরিচিত নম্বরের সঙ্গে সিক্রেট চ্যাট না করা
- 2FA ও ফোন লক সক্রিয় রাখা
- ডিভাইস হারালে দ্রুত অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করা
গোপনীয়তা বনাম নিরাপত্তা-দ্বন্দ্ব অব্যাহত
টেলিগ্রামের সিক্রেট চ্যাট যেমন গোপনীয়তা রক্ষা করে, তেমনি এটি তদন্তে বড় বাধা তৈরি করে। ফলে ভবিষ্যতে ডিজিটাল তদন্ত আরও বেশি নির্ভর করবে বার্তার ভেতরের তথ্য নয়, বরং ব্যবহারকারীর আচরণ ও প্যাটার্ন বিশ্লেষণের ওপর।
গুগল সার্চে যুক্ত হলো জেমিনি ৩
ফোনের আইএমইআই নম্বর চেক করবেন যেভাবে
তার ছাড়াই চার্জ দেওয়া যাবে পোকো এফ৮ ফোন