পাকিস্তানের যে প্রধানমন্ত্রীদের ‘নিরাপত্তা হুমকি’ আখ্যা দেওয়া হয়েছিলো

আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৪৩ এএম

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে দেশটির ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ হিসেবে অভিহিত করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী ইমরান খানের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ওই ব্যক্তির বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ এবং তার মধ্যে মানসিক অসুস্থতার লক্ষণও স্পষ্ট।

তবে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে কোনো জনপ্রিয় নেতাকে ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি’ বা ‘দেশদ্রোহী’ আখ্যা দেওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। দেশটির জন্মলগ্ন থেকেই সামরিক এস্টাবলিশমেন্টের সাথে দ্বন্দ্বে জড়ালে রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনার দীর্ঘ নজির রয়েছে।

পাকিস্তানের ইতিহাসে দেখা যায়, আইয়ুব খানের আমল থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিভিন্ন জনপ্রিয় নেতাকে ‘গাদ্দার’ বা ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি’ তকমা দেওয়া হয়েছে।

আইয়ুব আমল: ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান ক্ষমতা দখলের পর রাজনীতিবিদদের ‘সামাজিক কীটপতঙ্গ’ বলে অভিহিত করেছিলেন। এমনকি পাকিস্তানের জাতির পিতা জিন্নাহর বোন ফাতিমা জিন্নাহকেও ‘বিশ্বাসঘাতক’ ও ভারতীয় এজেন্ট বলা হয়েছিল।

ভুট্টো পরিবার: সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ফাঁসি দেওয়া হয় এবং তার মেয়ে বেনজির ভুট্টোকেও ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। বেনজিরের দেশপ্রেম নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল তৎকালীন সামরিক প্রশাসন।

নওয়াজ শরীফ: তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকেও অতীতে ‘দেশদ্রোহী’ ও ‘ভারতের বন্ধু’ আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে বিমান ছিনতাইয়ের ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাও করা হয়েছিল। অথচ বর্তমানে তিনি এস্টাবলিশমেন্টের গুডবুকে রয়েছেন।

ইতিহাসবিদ ও সমাজকর্মী আম্মার আলী জানের মতে, পাকিস্তানে দেশপ্রেম ও দেশদ্রোহিতার সংজ্ঞা নির্ধারণের ক্ষমতা যেন সেনাবাহিনীর হাতে কুক্ষিগত।

তিনি বলেন, ‘এটি একটি পুরোনো চলচ্চিত্রের মতো যা জনগণকে বারবার দেখানো হয়। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী থেকে শুরু করে মাওলানা ভাসানী, বেনজির ভুট্টো এবং নওয়াজ শরীফ সবাইকে একসময় না একসময় নিরাপত্তা ঝুঁকি বলা হয়েছে।’

বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলছেন, সেনাবাহিনী যদি এই নেতাদের এতই বিপজ্জনক মনে করে, তবে কেন শুরুতে তাদের সমর্থন দিয়ে ক্ষমতায় আনা হয়? ইমরান খানের বর্তমান পরিস্থিতি সেই পুরোনো ‘প্রক্রিয়ারই’ অংশ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

সূত্র: বিবিসি

DR/SN