ঢাকা
শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

রান্নায় বেঁচে যাওয়া তেল পুনরায় ব্যবহার কতটা ঝুঁকিপূর্ণ

আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৩১ পিএম

খাবার রান্নার একটি প্রধান উপকরণ হলো তেল। বাঙালি রান্নার প্রায় প্রতিটি পদেই তেলের ব্যবহার অপরিহার্য। তবে অনেক সময় আমরা রান্নায় বেঁচে যাওয়া তেল সংরক্ষণ করে পরবর্তীতে ব্যবহারের প্রবণতা দেখাই। কিন্তু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, পোড়া তেল পুনরায় ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

অতিরিক্ত তাপমাত্রায় একাধিকবার গরম করার ফলে তেলে ক্ষতিকর যৌগ তৈরি হয়, যা অ্যাসিডিটি, বুক জ্বালাপোড়া, স্ট্রোক, পারকিনসন, হৃদরোগ এবং এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে রান্নায় বেঁচে যাওয়া তেল পুনর্ব্যবহার করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সচেতনতা অবলম্বন করা জরুরি।

ব্যবহৃত তেল পুনরায় ব্যবহার করলে যেসব ক্ষতি হতে পারে

  • বিষাক্ত যৌগ তৈরি: একই তেল বারবার গরম করলে তাতে বিষক্রিয়া হতে পারে। বারবার গরম করা তেল থেকে বাজে গন্ধ বের হয় এবং তেলে HNE (4-hydroxy-2-nonenal) নামক ক্ষতিকর উপাদান সৃষ্টি হয়, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং হার্টের সমস্যার কারণ হতে পারে।
  • পুষ্টিগুণ নষ্ট: পোড়া তেল ব্যবহারের সময় আগের রান্নার কিছু অদৃশ্য কণা সেই তেলে থেকে যায়। একই তেলে রান্না করলে বিভিন্ন রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে, ফলে ফ্রেশ খাবার রান্না করলেও সেই খাবারের স্বাদ এবং বিশেষ করে পুষ্টিগুণ অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়।
  • হজমে সমস্যা: পুরনো তেল ব্যবহার করলে হজমের সমস্যা, অ্যাসিডিটি ও পাকস্থলীর জ্বালাপোড়া হতে পারে। দীর্ঘদিন এভাবে চলতে থাকলে লিভারের সমস্যা ও ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • ট্রান্স ফ্যাট বৃদ্ধি: তেল বারবার গরম করলে এতে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
  • ফ্রি র‍্যাডিক্যাল বৃদ্ধি: ব্যবহৃত তেলে ফ্রি র‍্যাডিক্যাল তৈরি হয়, যা কোষের ক্ষতি করে এবং মানুষের বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।

ব্যবহৃত তেল পুনর্ব্যবহারের ক্ষেত্রে করণীয়

যদিও ব্যবহৃত তেল পুনর্ব্যবহার করা অনুচিত, তবুও যদি একান্তই করতে হয়, তবে কিছু পদ্ধতি মেনে চলতে হবে।

কোনো কিছু ভাজার পর বেঁচে যাওয়া তেল প্রথমে সম্পূর্ণ ঠাণ্ডা করে নিতে হবে। এরপর তা ছেঁকে একটি এয়ারটাইট বোতলে সংরক্ষণ করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে এতে যেন কোনও খাদ্য কণা না থাকে।

পূর্বের তেল ব্যবহার করার আগে অবশ্যই তেলের রঙ এবং তরল ভাব পরীক্ষা করতে হবে। যদি দেখা যায় তেলের রঙ পরিবর্তন হয়েছে, বা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি আঠালো ও ঘন হয়েছে, তবে সেই তেল কোনোভাবেই ব্যবহার করা যাবে না।

কোনো খাবার ডুবো তেলে ভাজা হলে সেই তেল পুনরায় ব্যবহার করা উচিত নয়। তবে তেলের মান, ভাজার সময় ও তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে সেই তেল রান্নার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে, কিন্তু কোনো কিছু ভাজার জন্য নয়।

সচেতনতার গুরুত্ব

খাদ্য শুধু পেট ভরানোর উপকরণ নয়, এটি আমাদের শরীরের জ্বালানি। তাই রান্নার প্রতিটি উপাদান নিয়ে আমাদের সচেতন থাকা প্রয়োজন। বারবার গরম করা বা পুনর্ব্যবহৃত তেল স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। সুস্থ জীবনযাত্রার জন্য আমাদের উচিত তেল পুনর্ব্যবহার না করা, বিশুদ্ধ ও স্বাস্থ্যকর উপায়ে রান্না করা এবং সচেতন খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা। আমাদের একটুখানি সতর্কতাই হতে পারে সুস্থতার চাবিকাঠি।

NB
আরও পড়ুন