কর্মক্ষেত্রে সফলতা শুধু আপনার দক্ষতার ওপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে সহকর্মীদের সঙ্গে আপনার আচরণ ও যোগাযোগের ওপরও। একটিমাত্র অযৌক্তিক বা অসতর্ক মন্তব্যই একটি টিমের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি, দ্বন্দ্ব বা অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে পারে। পেশাদার সম্পর্ক মজবুত রাখতে তাই সবসময় সতর্ক থাকা জরুরি।
যেকোনো মন্তব্য করার আগে নিজেকে একবার প্রশ্ন করুন, ‘এই কথাটি কি সহকর্মীর সাথে সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে?’ নিশ্চিত হয়ে তারপরই বলুন।
আসুন, জেনে নেওয়া যাক এমন ১০টি কথা যা কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সাথে না বলাই বুদ্ধিমানের কাজ:
১) এটা আমার কাজ নয়
কর্মক্ষেত্রে দায়িত্বের সীমা থাকলেও, সরাসরি এভাবে বললে আপনাকে অপেশাদার মনে হতে পারে। এটি আপনার সহযোগিতা না করার মনোভাব প্রকাশ করে, যা টিমের বিশ্বাস এবং সহযোগিতা কমিয়ে দেয়।
পরিবর্তে বলতে পারেন: ‘সাহায্য করতে পারলে ভালো লাগত, তবে আমি শিওর না এটা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে কিনা। আমরা কি একসাথে এটা সলভ করতে পারি?’
২) এই কাজের জন্য আমার সময় নেই
সময় সীমিত থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু এভাবে বললে সহকর্মী অবহেলিত বোধ করতে পারেন। মনে হতে পারে আপনি তাদের বা টিমের কাজকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
পরিবর্তে বলতে পারেন: ‘আমি এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে মনোযোগ দিচ্ছি। আমরা কি একটি সময় ঠিক করতে পারি যেটাতে আমাদের দুইজনেরই সুবিধা হবে?’
৩) এ বিষয়টা কখনোই কাজ করবে না
কোনো নতুন ধারণা বা প্রস্তাবকে সরাসরি বাদ দিলে টিমের সৃজনশীলতা কমে যায় এবং সহকর্মীর মনোবল ভেঙে যেতে পারে। সমালোচনা করুন, তবে তা যেন হয় উৎসাহমূলক।
পরিবর্তে বলতে পারেন: ‘আইডিয়া দারুণ! তবে আমরা এটিকে আরেকটু বাস্তবায়নযোগ্য করে তারপর পরীক্ষা করতে পারি?’
৪) আপনি সবসময় এমন
সহকর্মীর আচরণকে এভাবে চিহ্নিত করা বা অভিযোগপূর্ণ মন্তব্য (যেমন: ‘আপনি সবসময় দেরি করেন’) বিরোধ সৃষ্টি করতে পারে। এতে তারা প্রতিরক্ষামূলক মনোভাব নিতে পারে।
পরিবর্তে বলতে পারেন: ‘আমি লক্ষ্য করেছি, শেষ দুই দিন সমস্যা হয়েছে। আমরা কি সমাধানের জন্য কিছু করতে পারি?’ (সমস্যাকে নির্দিষ্টভাবে তুলে ধরুন, ব্যক্তিগত আঘাত নয়।)
৫) আমি এই লোকটির সঙ্গে কাজ করতে চাই না
সহকর্মীর প্রতি ব্যক্তিগত বিরোধ প্রকাশ করা পুরো টিমের মনোবলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং কর্ম পরিবেশ নেতিবাচক করে তোলে। পেশাদার পরিবেশে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব নয়, সমাধান জরুরি।
পরিবর্তে বলতে পারেন: ‘আমার কিছু দিক থেকে কাজের ধারাবাহিকতায় সমস্যা হচ্ছে। আমরা কি ম্যানেজার বা টিম লিডের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের পথ খুঁজতে পারি?’ (ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব না করে পেশাদারভাবে সমস্যা সমাধান করুন।)
৬) আমি শুধু সত্যি কথাটা বলছি
সত্য বলা গুরুত্বপূর্ণ, তবে কটু বা আক্রমণাত্মক টোনে সত্য বলার আড়ালে নিজের বক্তব্যকে ঠিক বলে দাবি করা অপেশাদার। এটি অন্যের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে।
পরিবর্তে বলতে পারেন: ‘আমার মতামত এটা। তারপরও আমরা কি একসাথে এটি আরও উন্নত করার উপায় দেখতে পারি?’ (সততা প্রকাশের সঙ্গে সম্মান ও সমাধানমুখী মনোভাব রাখুন।)
৭) এটা ন্যায়সঙ্গত নয়
সুবিচারের অভাব নিয়ে অভিযোগ করা স্বাভাবিক, কিন্তু শুধু অভিযোগ করলে সমস্যা সমাধান হয় না এবং সহকর্মীরা বিরক্ত হতে পারে। অভিযোগের সঙ্গে সমাধানের প্রস্তাব জরুরি।
পরিবর্তে বলতে পারেন: ‘আমরা কি আলোচনা করতে পারি যাতে কাজের ভাগবণ্টন আরও ন্যায্য হয়?’
৮) আমি শুনেছি...
অনিশ্চিত তথ্য বা গুজব শেয়ার করা সহকর্মীদের মধ্যে বিশ্বাসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, অফিসে অস্থিরতা সৃষ্টি করে এবং সহকর্মীর ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারে।
পরিবর্তে বলতে পারেন: ‘এই বিষয়টা অফিস মিটিংয়ে পরিষ্কারভাবে জানা যাবে, তাই এখনই কিছু বলা ঠিক হবে না।’
৯) আপনি বুঝবেন না
কারো বোঝার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা বা এমন মন্তব্য করা সরাসরি অপেশাদার এবং নেতিবাচক আচরণ, যা সহকর্মীর মধ্যে অপমানবোধ সৃষ্টি করতে পারে।
পরিবর্তে বলতে পারেন: ‘আমি আমার মতটা একটু ব্যাখ্যা করি, তাহলে আমরা একে অপরের দিকটা আরও ভালোভাবে বুঝতে পারব।’ (আলোচনা করে বোঝাপড়া উন্নত করার চেষ্টা করুন।)
১০) এটা আমরা এভাবেই করি সবসময়
পরিবর্তনের প্রতি অনীহা উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতার পথে বাধা দেয়। শুধুমাত্র প্রচলিত পদ্ধতির ওপর নির্ভর করলে একটি টিমের কাজের গতি ধীর হতে পারে।
পরিবর্তে বলতে পারেন: ‘আমরা কি নতুনভাবে চেষ্টা করতে পারি? এতে হয়তো কাজটা আরও ভালোভাবে করা যাবে।" (পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি করুন এবং টিমকে উৎসাহিত করুন।)
কর্মক্ষেত্রে শুধু দক্ষতা নয়, আচরণ এবং মন্তব্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কর্মক্ষেত্রে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং সহকর্মীদের সঙ্গে সম্মানজনক, সহযোগিতামূলক এবং ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরি করতে সর্বদা চিন্তাভাবনা করে কথা বলুন।
জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্থাপত্যের ভাষা বদলাতে হবে