গাছপালা বা বাগান করার প্রতি ভালো লাগা থাকলেও শহুরে বাড়িগুলোতে জায়গা কম থাকার কারণে অনেকে এ শখ পূরণ করে উঠতে পারেন না। তবে বৃক্ষপ্রেমীরা কিছু কৌশলে বাড়িতে অল্প জায়গার মধ্যেও গাছ রোপণ করতে পারেন। জায়গা সংকট থাকার পরও একটু বুদ্ধি খাটিয়ে শখের গাছগুলো দিয়ে বারান্দা বাগান করে ফেলতে পারবেন। কীভাবে, জানাচ্ছি সেসব সহজে রোপণ যোগ্য এবং প্রয়োজনীয় কিছু গাছের গল্প।
তুলসী : তুলসী পাতার গাছ খুব তাড়াতাড়ি বড় হয়। বাড়িতে ছোট টবে তুলসী পাতার গাছ রোপণ করতে পারেন খুব সহজেই। সাধারণত এপ্রিল এবং মে মাসে এ গাছের চারা রোপণ করলে ভালো। বারান্দার ছোট টবে তুলসী গাছের চারা রোপণ করুন। নিয়মিত পানি দিন। যত্ন করুন। সঠিক যত্নের অভাবে এ গাছের পাতাটি শুকিয়ে যেতে পারে। ঔষধি গুণের জন্য তুলসী বেশ পরিচিত। পুষ্টিগুণে ভরপুর তুলসী পাতাতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান। এছাড়া তুলসী পাতাতে ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস, এসেনশিয়াল অয়েল, ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। উপকারী এ পাতা কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে। রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

পুদিনা : পুদিনা পাতাতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের চমৎকার উৎস। নানা ঔষধি গুণে ভরপুর পুদিনা পাতাতে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল, অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম, ফোলেট, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যারোটিন, পটাসিয়াম পাওয়া যায়। পুদিনা পাতার রস নিয়মিত পান করুন। এতে আপনার পেটের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। ক্লান্তি দূর হয়। অল্প আলো এবং হালকা ছায়ায় আপনি পুদিনা পাতার গাছ খুব সহজেই রোপণ করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন, পুদিনা পাতা যে মাটিতে রোপণ করবেন, তা যেন আর্দ্রতা থাকে। পুদিনা পাতার গাছ নিয়মিত ছাটুন। এতে পাতা ভালো জন্মাবে।
অ্যালোভেরা : অ্যালোভেরা পাতার উদ্ভিদ রোপণের জন্য প্রথমে কচি এবং তাজা অ্যালোভেরার পাতা নিন। পাতার নিচের অংশ হালকা শুকিয়ে এলে টবে রোপণ করুন। নিয়মিত অল্প পরিমাণে পানি দিন। কিছুদিন পর দেখবেন, অ্যালোভেরার নতুন পাতা গজাচ্ছে। অ্যালোভেরাতে ভিটামিন, মিনারেলসহ এনজাইম, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, কপার এবং সোডিয়াম রয়েছে। অ্যালোভেরার পাতার গাছ ভালো রোপণের জন্য এর টবকে রৌদ্রজ্বল জায়গায় রাখুন।
কারি পাতা : রান্নায় কারি পাতার ব্যবহার তা খাবারের স্বাদকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেয়। কারি পাতার গাছ রোপণ করতে ভালো মানের মাটি নিন। এরপর মাটিতে এ গাছের চারা লাগান। কারি পাতার গাছের ভালো বৃদ্ধির জন্য মাটিতে সার বা কম্পোস্ট যোগ করুন। নিয়মিত পানি দিন। যেখানে সূর্যালোক পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়, সে জায়গায় কারি পাতার গাছ রোপণ করুন।
মানি প্ল্যান্ট : নিয়মিত পানি দিলেই মানিপ্ল্যান্ট খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠে। মানি প্ল্যান্ট ঘরে হালকা সূর্যের আলো পৌঁছায় বা সরাসরি রোদ নাও আসে সেসব জায়গাতেও রাখতে পারেন। প্রখর রোদে না রাখাই ভালো। বারান্দার ছোট টবে বা হ্যাঙ্গিং পটে মানি প্ল্যান্ট রাখুন।
গাঁদা ফুল : আপনার বাড়িতে বা বেলকনিতে খুব সহজেই গাঁদা ফুলের গাছ রোপণ করতে পারেন। গাঁদা ফুল বাড়ির পোকামাকড় দূর করতে সহায়তা করে। গাঁদা ফুলের বীজের চারা রোপণ করার জন্য মাটি ভালোভাবে নিষ্কাশন করে নিন। মাঝে মাঝে পানি দিন।

লাকি ব্যাম্বু : বসার ঘরের টবে রাখতে পারেন লাকি ব্যাম্বু। লাকি ব্যাম্বুর গাছে পানি দেওয়ার সময় খেয়াল রাখুন, মাটি যেন পুরোপুরি পানি দিয়ে ভেজা অবস্থায় না থাকে। মাটি শুকানোর পর লাকি ব্যাম্বুর চারায় পানি দিন। বৃত্তাকার কাঁচের পাত্রে লাকি ব্যাম্বু খুব তাড়াতাড়ি জন্মায়।
স্নেক প্লান্ট : বায়ু বিশুদ্ধকরণের জন্য স্নেক প্ল্যান্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ গাছটি সহজে বেড়ে ওঠতে পারে। এর পাতাগুলো দেখতে অনেকটা তরবারির মতো। স্নেক প্ল্যান্টের পরিণত গাছের গোড়া থেকে নতুন চারা জন্মায়। নতুন চারা ৫ থেকে ৬ ইঞ্চির মতো বড় হলে, তা ছুরি দিয়ে শিকড়সহ কেটে নিন এবং অন্য একটি টবে লাগান। এই গাছের জন্য উর্বর- দোয়াশ মাটি নিন। মাটিতে জৈব সার মেশান। তবে প্রতি বছর এ প্ল্যান্টের মাটি এবং টব পরিবর্তন করা জরুরী।
মরিচ : অন্যান্য গাছের মতো মরিচ গাছ খুব সহজেই রোপণ করা যায়। মরিচ গাছের চারা খুব সহজেই অংকুরিত হয়। মরিচের ভালো ফলনের জন্য মরিচ গাছের চারাকে সূর্যালোক এবং বাতাসের সংস্পর্শে রাখুন।
লেবু : বারান্দায় ১২ ইঞ্চি টবেই চাইলে লেবু গাছ বসাতে পারেন। কোনো বাড়তি ঝামেলা ছাড়াই লেবু গাছের চারা মাটিতে রোপণ করুন। যত্ন করুন এবং নিয়ম করে পানি দিন। দরকারে সহজেই পেয়ে যাবেন লেবুর পাতা এবং লেবু।
