বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পানীয়ের তালিকায় ওপরের দিকে থাকবে চায়ের নাম। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যমতে, পানির পরে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় পানীয় হলো চা। চা পান করা অনেকের কাছে কেবল অভ্যেস মনে হলেও এর রয়েছে বেশ কিছু স্বাস্থ্যগুণ। চা মানবদেহের ক্লান্তি দূর থেকে শুরু করে আয়ু বৃদ্ধি করে। তবে চা পানের কিছু ক্ষতিকারক দিকও রয়েছে। অনেক চা পানের অভ্যাস আসলে আমাদের পাচনতন্ত্রের ক্ষতি করে। সেসব চা এড়িয়ে চলা আবশ্যক। নইলে হয়ত উপকার পেতে চা পান করলেও তা হবে স্বাস্থ্য ঝুঁকির অন্যতম কারণ।
এই প্রতিবেদনে খবর সংযোগের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো যেসব চা মানব দেহের জন্য অস্বাস্থ্যকর।

খালি পেটে দুধ চা
ঘুম থেকে জেগেই বা খালি পেটে দুধ চা চা পান করলে পাচনতন্ত্রের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কেননা রাতভর বিশ্রামের সময় পেট তার অ্যাসিডিক অবস্থা বজায় রাখে। দুধ চায়ে ক্যাফেইন এবং ট্যানিন থাকায় তা খালি পেটে পান করলে অ্যাসিডের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। ফলে অ্যাসিডিটি এবং বুকজ্বালার সংমিশ্রণ ঘটে, যার সাথে পেট ফুলে যাওয়া এবং অন্ত্রের আস্তরণে জ্বালা দেখা দেয়। এছাড়াও হজমশক্তি ব্যাহত হয় এবং পুষ্টির শোষণ হ্রাস পায়।

চিনি মেশানো চা
প্রিয় পানীয় চায়ে স্বাদ বৃদ্ধি করতে সাধারণত মানুষ চিনি যুক্ত চ পান করেন। তবে চিনি যুক্ত চা হতে পারে স্বাস্থ্য ঝূঁকির অন্যতম কারণ। কেননা অতিরিক্ত চিনি পেটের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে। মাত্রাতিরিক্ত চিনি পাকস্থলির ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে। ফলে পেট ফাঁপা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য সহ হজমের সমস্যা দেখা দেয়। এতে দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করে যার মধ্যে রয়েছে স্থূলতা এবং ডায়াবেটিস।

ডিটক্স বা স্লিমিং টি
ডিটক্স এবং স্লিমিং টি-এর দ্রুত ওজন কমানোর দাবি পাচনতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বয়ে আনে। রেচক, ক্যাফেইন এবং অন্যান্য ভেষজ যৌগ পাচনতন্ত্রে জ্বালা সৃষ্টি করে, যা অসংখ্য ডিটক্স এবং স্লিমিং টি-তে উপস্থিত থাকে। এ ধরনের পানীয় বারাবর পান করলে পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া এবং ডিহাইড্রেশন সৃষ্টি হয়। ডিটক্স চায়ের স্বল্পমেয়াদী রেচক প্রভাব অন্ত্র পরিষ্কারের একটি মিথ্যা ধারণা তৈরি করে, অতিরিক্ত খেলে তা প্রাকৃতিক মলত্যাগ এবং অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে। সাবধানতার সঙ্গে ডিটক্স চা পান করা উচিত, পেটের স্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত চিকিৎসা হিসেবে এটি ব্যবহার করা উচিত নয়।

অতিরিক্ত গ্রিন টি
গ্রিন টি-তে পলিফেনল থাকে যা পাচনতন্ত্রের উপকারী অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াকে সহায়তা করে। গ্রিন টি সুপারিশকৃত মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে ক্ষতিকারক হয়ে ওঠে। অতিরিক্ত গ্রিন টি পান করার ফলে পেটের সমস্যা, বমি বমি ভাব এবং ডায়রিয়া হয়। গ্রিন টি-তে ক্যাফেইন এবং ট্যানিনের সংমিশ্রণকে স্বাস্থ্যকর বলে মনে করা হয় না এবং প্রতিদিন ৩-৪ কাপের বেশি খাওয়া উচিত নয়, এমনকী যদি সম্ভব হয় তবে কমও।

অতিরিক্ত গরম চা
১৪০°F (৬০°C) এর বেশি তাপমাত্রায় গরম চা পান করলে পাচনতন্ত্র এবং পাকস্থলীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। ১৪০°F (৬০°C) এর বেশি তাপমাত্রায় চা পান করলে খাদ্যনালী এবং পাকস্থলীর সঙ্গে সংযুক্ত কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় যা প্রদাহের কারণ হতে পারে। মিউকোসাল টিস্যুর সঙ্গে গরম তরলের বারবার সংস্পর্শ সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে এবং বিপজ্জনক পদার্থের প্রতি তাদের আরও সংবেদনশীল করে তোলে। গরম তরল মুখ এবং গলার অংশে যন্ত্রণাদায়ক জ্বালাপোড়ার কারণ হতে পারে। গরম তাপমাত্রার পরিবর্তে আরামদায়ক উষ্ণ তাপমাত্রায় চা পান করলে পাচনতন্ত্র সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে রক্ষা পায়। তথ্য সূত্র: সংগৃহীত
